
চীনের সীমান্ত থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে একটি গোপন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি স্থাপন করেছে উত্তর কোরিয়া। এতে পূর্ব এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি তৈরি করতে পারে। বুধবার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সিএসআইএস জানিয়েছে, ‘সিনপুং-ডং’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম নয়টি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং তাদের মোবাইল লঞ্চার রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘাঁটিটি উত্তর কোরিয়ার ১৫ থেকে ২০টি অঘোষিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও ওয়ারহেড সংরক্ষণাগারের মধ্যে একটি। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ, উত্তর কোরিয়ান অভিবাসীদের ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, অবহৃত নথি এবং ওপেন-সোর্স তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এর অধীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি তাদের অস্ত্র কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। নতুন অস্ত্র তৈরি ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত হামলার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে এই অস্ত্র কার্যক্রম চললেও, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতা বেড়েছে। উত্তর কোরিয়ার সেনা সদস্যরা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিচ্ছে। এতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে রাশিয়া এর বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারে।
সিনপুং-ডং ঘাঁটিটির আয়তন ২২ বর্গকিলোমিটার। এটি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও বড়। এটি একটি পাহাড়ি উপত্যকার মধ্যে গোপনে স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে গাছ ও ঝোপঝাড় দিয়ে কিছু স্থাপনা আচ্ছাদিত। শুধুমাত্র শীতকালে স্যাটেলাইট চিত্রে তা স্পষ্ট হয়।
ইওয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইফ-এরিক ইজলি বলেন, ‘চীনের এত কাছে ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া কৌশলগতভাবে একটি অবস্থান নিতে চাচ্ছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ কোরিয়ার আক্রমণের ক্ষেত্রে চীন কী প্রতিক্রিয়া দেবে, তা অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগাতে পারে।’
২০০৪ সালে ঘাঁটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০১৪ সাল থেকে এটি সক্রিয় রয়েছে বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে। এখানে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে হাসং-১৫ অথবা হাসং-১৮ মডেলের আইসিবিএম থাকতে পারে, কিংবা এমন কোনো নতুন মডেল যা এখনো প্রকাশ পায়নি।
এই ঘাঁটিতে মোবাইল লঞ্চারও রয়েছে, যেগুলো সহজেই স্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন পূর্ব-পরীক্ষিত অবস্থান থেকে হামলা চালাতে সক্ষম। সংকট বা যুদ্ধকালীন সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও লঞ্চারগুলো ঘাঁটি ত্যাগ করে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হামলা চালাতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার এই ‘মিসাইল বেল্ট’-এর অংশ হিসেবে এই ঘাঁটি তাদের কৌশলগত পরমাণু ক্ষমতা ও প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর প্রমাণ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কাছে ৪০ থেকে ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিম জং উন বারবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দেশটির পারমাণবিক শক্তি আরও বাড়াবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করলে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম