
সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটে কারচুপি ও জালিয়াতি ঠেকাতে এবারই প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে থ্রিডি সিকিউরিটি সিস্টেম।
নির্বাচন কমিশন জানায়, এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮৬০ জন। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল (বুধবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রাকসু নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ প্রস্তুতির বিষয় তুলে ধরে। কমিশন জানায়, ভোটাররা তিন ধাপের যাচাই শেষে ভোট দিতে পারবেন। প্রতিটি ধাপে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, কারচুপি ঠেকাতে শুধু অমোচনীয় কালি নয়, আমরা থ্রিডি লেভেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রথম ধাপে যাচাই করা হবে ভোটারের শিক্ষার্থী আইডি কার্ড, দ্বিতীয় ধাপে দেখা হবে ইউনিক আইডি নম্বর, এবং তৃতীয় ধাপে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে যাচাই শেষে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকলেও বিকেল হতে হতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা একদিকে গানবাজনায় মেতে উঠেন। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীরা মেতেছেন মেহেদি উৎসবে। দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
পরিবহন মার্কেটে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী কাব্য কুন্ডু বলেন, ক্যাম্পাসে আছি প্রায় ৪ বছর। কিন্তু কখনো ক্যাম্পাসে এমন উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়েনি। খুবই ভালো লাগছে। রাকসুর কারণে সবাই দলমত ভুলে গিয়ে একসাথে আনন্দ করছে। এটাই সবচেয়ে ভালো লাগছে।
পরিবহন মার্কেটে নারী শিক্ষার্থীদের মেহেদি পড়িয়ে দেয় স্বতন্ত্র নারীবিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী নিশা আক্তার। তিনি সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মেহেদি পড়িয়ে দিয়ে ভালো লাগছে। ক্যাম্পাসে এমন পরিবেশ কখনো তৈরি হয়নি। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ক্যাম্পাসে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা কাল ভোট দিয়ে যোগ্য লোকদের নির্বাচিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। এর ভেতর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন।
এ নির্বাচনে ১১টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আলোচিত ৮টি প্যানেল হলো- ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, সাবেক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে ‘আধিপত্যবাদবিরোধি ঐক্য’, বাম জোটের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঘোষিত ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, সাবেক আরেক নারী সমন্বয়কের নেত্বতে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন মনোনীত ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম