
জাতীয় দিবস ও মধ্য-শরৎ উৎসবের ছুটিতে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের পরতে পরতে যেন ফুটে উঠেছিল প্রেম। বরফে ঢাকা ইউলোং পর্বত আর স্বচ্ছ আরহাই হ্রদের পাড়জুড়ে ছিল বিয়ের উচ্ছ্বাস। সারাদেশ থেকে জুটিরা এখানে ছুটে এসেছিলেন মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোলে বিয়ের শপথ নিতে। এই ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ বা গন্তব্যের থিমভিত্তিক বিয়ে এখন নতুন প্রাণ দিচ্ছে ইয়ুননানের পর্যটন খাতে।
পর্বত, হ্রদ আর স্থানীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে এসব গন্তব্য-বিয়ে কেবল আবেগের নয়, অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী। উত্তর চীনের শানসি প্রদেশ থেকে আসা নবদম্পতি ছেন সিং ও লি মেংইউয়ান বলেন, ‘বরফে ঢাকা পর্বতের নিচে বিয়ে করাটা সাধারণ ভোজসভা আয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থবহ ও সাশ্রয়ী।’
সম্প্রতি আট দিনের ছুটিতে তালি ও লিচিয়াংয়ের বিয়ের ভেন্যুগুলো প্রায় ১০০ শতাংশ বুকড। অনেকে নতুন অর্ডার নেওয়াও বন্ধ করে রেখেছে।
তালির একটি বিয়ে সংস্থার প্রধান ছু সিয়াওওয়েন জানান, ‘সেপ্টেম্বর থেকে আমরা ডেসটিনেশন ওয়েডিংয়ের সেরা মৌসুমে আছি। ছুটির দিনে প্রতিদিন তিন থেকে আটটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ইয়ুননান প্রাদেশিক সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের উপপ্রধান রাও সিয়াংবি বলেন, ‘ইয়ুননান নিজেই একটি রোমান্টিক অনুভূতির প্রতীক। আরহাই ও তিয়ানছি হ্রদ থেকে শুরু করে সিশুয়াংবান্নার রেইনফরেস্ট আর ইয়ুলোং পর্বত—প্রতিটি স্থানই প্রেমের বার্তা বহন করে।’
তালিতে এখন রয়েছে ৩০টির বেশি থিমভিত্তিক বিয়ের আয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে হ্রদপাড়ের অনুষ্ঠান এবং ঐতিহ্যবাহী বাই-স্টাইলের উঠোনবাড়ি-বিয়ে। প্রায় দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যুক্ত এই খাতে।
চীনের যুবপ্রজন্ম এখন ব্যয়বহুল ঐতিহ্যবাহী ভোজসভা এড়িয়ে সহজ, ব্যক্তিগত ও ভ্রমণঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা বেছে নিচ্ছে।
সিছুয়ান থেকে আসা নববধূ লিউ সি-চি বলেন, ‘ভ্রমণ আর বিয়ের খরচ মিলিয়ে ৪০ হাজার ইউয়ানেই সব সম্পন্ন হয়ে যায়—আমাদের জন্য একদম নিখুঁত।’
এই প্রবণতা স্থানীয় অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আনছে। লিচিয়াংয়ের মেকআপ শিল্পী ওয়াং ইহান জানান, তার বার্ষিক অর্ডার ২০০ থেকে বেড়ে প্রায় হাজারে পৌঁছেছে।
শুধু তালিতেই ২০২৪ সালে পাঁচ হাজারের বেশি বিয়ে হয়েছে। ২ লাখ দম্পতি ট্রাভেল ফটোগ্রাফি নিয়েছেন, আর পুরো খাতের আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউয়ান।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম