মঙ্গলবার,

০১ জুলাই ২০২৫,

১৬ আষাঢ় ১৪৩২

মঙ্গলবার,

০১ জুলাই ২০২৫,

১৬ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

দাদা তোমার দরবারে সব প্রেমিকার মেলা

মেসবাহ শিমুল, সাংবাদিক 

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ২০ মে ২০২২

Google News
দাদা তোমার দরবারে সব প্রেমিকার মেলা

প্রশান্ত কুমার হালদার আমাদের অগ্রজ। একই ইউনিয়নে বাড়ি। যদিও অর্থ কেলেঙ্কারির আগে তার নাম কখনো শুনেছি বলে মনে পড়ে না। তবে এখন তার নাম কেবল দেশে নয় বিশ্বমিডিয়ায় পৌঁছে গেছে। স্বাভাবিক কারনেই বিষয়টি নিয়ে আমার শিহরিত হওয়ার কথা। হয়েছিও তাই। তবে এই শিহরণ অন্যরকম। এতো বড় একজন লুটেরার বাড়ি আমার এলাকায়। এই রতœকে আগে কেন চিনিনি! এই ভেবে ভেবে দিনগুলো বিষাদে কাটছে। 

খবরে দেখছি আমাদের পিকেদা অন্তত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। কী ভয়ানক ব্যাপার। কী বিশাল মাপের কলিজা তার, একবার হাতে ধরে দেখতে মন চায়। অথচ তার সংসার নেই। বিয়ে করেননি। কাদের জন্য এই টাকা মারলেন তিনি? নাকি টাকা লোপাটের বিষয়টি তার বিলাসিতায় পরিণত হয়েছিলো? 

ব্যাক্তি জীবনে তিনি বিয়ে না করলেও তার অসংখ্য বান্ধবী ছিলো। নিজ ধর্মের বাইরেও সেইসব ললনাদের পেছনে তিনি বিশাল অংকের টাকা লগ্নি করেছেন বলে টেলিভিশনে সংবাদ বেরিয়েছে। সেখানে মোটামুটি তিনজন নারী তথা বান্ধবীর পেছনে তার ৭০০ কোটি টাকা খরচের একটি ফিরিস্তি উঠে এসেছে। সেইসব সুন্দরীদের জন্য তার মনের বিশালতা, হৃদয়ের উদারতার কাছে মোঘল স¤্রাট শাহজাহানও যেন নস্যি। কর্পোরেট দুনিয়ার কারনে হয়তো পিকেদা তাজমহল বানিয়ে দেননি কিন্তু বান্ধবীদের গাড়ি-বাড়ি, ফ্লাটের পাশাপাশি আস্ত কোম্পানী কিনে দিয়েছেন। এই উপহার পৃথিবীর আর কেউ দিয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশে এর আগে কেউ দেয়নি এটি বলতে পারি। 

গত বছরের জুলাই মাসে দৈনিক কালের কণ্ঠের একটি রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানসিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পাচারকৃত এইসব টাকার গন্তব্যস্থল হিসেবে ১০ দেশকে উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলো হলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ককেও নতুন গন্তব্য হিসেবে কেউ কেউ বেছে নিতে শুরু করেছেন। তবে এই ক্ষেত্রে দাদারা অনেকটা ব্যতিক্রম। তারা সুযোগ পেলেই আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে সেকেন্ডহোম বানায়। তাদের নাড়ির একটি সুতা যে ওপারেই পোতা রয়েছে। তাই তাদের সেখানে টানে। সে কারনে আয়-রুজি, চুরি-ডাকাতি এপারে আর খাই-দাই, বাড়ি বানাই ওপারে এরকম একটা অবস্থা। 

করোনা কালে পাশের এলাকার একজন ডাব ব্যবসায়ির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিলো। হিন্দু ভদ্রলোকের একটি মাত্র সন্তান অটিস্টিক। তারপরও ভারতে সম্পদ করেছেন। অনেকটা গর্বের সঙ্গে দেওয়া তার সে বর্ণনা শুনছিলাম আর মনে মনে হিসাব মেলাচ্ছিলাম। এই দেশে বসে টাকা কামাই করছে আর ওই দেশে সম্পদ করছে কি আজব বৈপরীত্য! কোনো হিসাব মিলছিলো না। সে তো নিজেও ভোগ করছে না। আবার বলতে গেলে সন্তানও নাই। তাহলে কিসের জন্য এই আয়োজন। পরে বুঝতে পারলাম। এটি একটি ট্রেন্ড, ফ্যাশন। এই ফ্যাশন আমাদের দেশের সনাতনীদের মধ্যে অত্যন্ত প্রবল। তারা কেন যেন এই দেশকে আপন করে ভাবতে পারে না, পারেনি। 

পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদার গ্রেফতার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে এর আগে ডাক বিভাগের শুধাংশ শেখর ভদ্র ৫শ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসকে সুর চৌধুরী ১ হাজার কোটি টাকা ও টেকনাফের কুখ্যাত ওসি প্রদীপ কুমার ৩শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। এটি একটি সহজলভ্য তথ্য। এর বাইরে আরো যে রয়েছে সেটি বলাই বাহুল্য। 

আওয়ামী লীগ সরকারকে বলা হয় হিন্দু বান্ধব সরকার। তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মাদরাসার সুপার, মসজিদ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সচিবালয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তাদের জয়জয়াকার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে গত প্রায় দেড় দশক ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে নিয়োগ হয়েছে তার সিংহভাগই হয়েছে হিন্দু প্রার্থীদের মধ্য হতে। অথচ আমাদের দেশে হিন্দুদের হার শতকরা সাড়ে ৮ ভাগ। ন্যায্যতার ভিত্তিতে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিলেও সেটি আরো অনেক কম হওয়ার কথা। 

গত কয়েক বছর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে এক হিন্দু নারী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টি অনেকেরই জানা। সেই প্রিয়া সাহার বাড়িও একই এলাকায়। সে সময় তার ওই বক্তব্যে সারাদেশে তুমুল সমালোচনা হয়েছিলো। তাকে গ্রেফতার করে এ ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ দেওয়ার ব্যখ্যা চাওয়া উচিত ছিলো কিন্তু হিন্দুবান্ধব সরকার সেটি করেনি। তার ওই অভিযোগের কারনে সে সময় বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। তবে সরকারের আঁতে তাতে ঘা লাগেনি। 

দ্রব্যমূল্য এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বাড়তি। বাংলাদেশে সেটি একটু বাড়াবাড়ি রকমের। বিশেষ করে প্রতিবার রমজান মাস এলেই ব্যয়সায়ীরা সবাই মজুতদার হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সয়াবিন তেল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে একটি ব্যবসায়ী চক্র। পরে ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে নামে। এই সময়ের মধ্যে যেসব মজুতদারদের অবৈধভাবে তেল সংরক্ষণের দায়ে জরিমানা করা হয় তাদের বেশিরভাগই ছিলো হিন্দু। অথচ তারা সারা বছরই ব্যবসা করছে। রমজানে তারা মানুষকে জিম্মি করে সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে ফেলে। এভাবে আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও কেন যেন এই দেশের বিপক্ষে, দেশের সিংহভাগ মানুষের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। 

আমাদের দেশে সংখ্যা লঘু নির্যাতন যে হয়নি বা হয় না বিষয়টা তা নয়। তবে নির্যাতনের বেশিরভাগই দেখা যায় পরিকল্পিত। এবং আওয়ামী লীগের আমলে, তাদের নেতাকর্মীদের দ্বারাই বেশি নিগিৃহীত হওয়ার ঘটনা ঘটে। যে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে মাত্র সাড়ে ৮ ভাগ জনগোষ্ঠীকে কাছে টানতে মরিয়ে হয়ে উঠে আবার তারাই সুযোগ পেলে তাদের কামড়ে দেয়। যায়গা-সম্পত্তির লোভ কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় হিন্দুদের। রংপুর, কুমিল্লার সাম্প্রতিক দুটি ঘটনাই যার বড় প্রমাণ।

দেশে এখন আরেকটি ইস্যু চলমান। ১১৬ জন ইসলামী বক্তাকে দুদকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে একটি চিহ্নিত গ্রুপ। এইসব বক্তাদের ধর্ম ব্যবসায়ী উল্লেখ করে গণকমিশন নামের ওই গ্রুপটি একটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ করেছে। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে এমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে যে, রীতিমত তোপের মুখে পড়েছে ওই গ্রুপটি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে দেশে এতো এতো অর্থ লোপাটকারী, শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারী, বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, অর্থ পাচারকারী, শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী, মজুদদার, কালোবাজারি, ধর্ষণকারী থাকতে শুধু এইসব আলেমদের নিয়ে এরা উঠেপড়ে লাগলো কেন? দেশে কি কেবল ইসলামী বক্তারাই ধর্ম ব্যবসা করেন, অন্য ধর্মের কেউ কি এই ধরণের ব্যবসা করেন না? একটি স্বাধীন দেশে, রাষ্ট্রীয় নানা সংস্থা কার্যকর থাকতে এইসব আলেমদের বিরুদ্ধে এমন তদন্ত কমিশন করার এখতিয়ার তাদের কে দিল? কিংবা যাদের বক্তব্য শুনতে খোলা ময়দানে হাজার হাজার শ্রোতা নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে জমায়েত হন তাদের বিরুদ্ধে এই ধরণের ঔদ্ধত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে কারা তাদের উস্কে দিলো? এমন বহু প্রশ্ন উঠছে। এইসব প্রশ্নের হয়তো এখনই কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। তবে এসবের পেছনে এইসব মালদার হালদারদেরও যে হাত থাকতে পারে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন তথ্যও বেরিয়ে আসবে। তখন অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

লেখক: সাংবাদিক ও কথাশিল্পী। 
 

রেডিওটুডে নিউজ/এমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের