ভারতের নয়াদিল্লির লালকেল্লায় ১০ নভেম্বরের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সামনে এসেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর নতুন কৌশল-যানবাহনভিত্তিক তাৎক্ষণিক বিস্ফোরক ডিভাইস ভি-বাই-ইডি (VBIED-Vehicular-Borne Improvised Explosive Device)। একে গাড়িবোমা বা কার বোমাও বলা হয়। সেই দিন সন্ধ্যায় হুন্দাই আই২০ গাড়িতে আমোনিয়াম নাইট্রেট–ফুয়েল অয়েল ভরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যাতে ১৩ জন নিহত হন।
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে ভি-বাই-ইডি সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার কৌশল, কারণ এতে গোটা গাড়িটিই বোমা হিসেবে কাজ করে আর এর ধাতব টুকরো এবং যন্ত্রাংশ চারদিকে ছিটকে গিয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায়। এতে পুরো গাড়িটিই একটি বিশাল বিস্ফোরক যন্ত্রে পরিণত হয়। যানবাহনের ভেতরে উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক ভরাট করে তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হলে বিস্ফোরণের মুহূর্তে গাড়ির প্রতিটি অংশ-ইঞ্জিন ব্লক, বডি প্যানেল, চাকা, দরজা, এমনকি ক্ষুদ্রতম ধাতব স্ক্রুগুলো পর্যন্ত-প্রাণঘাতী শার্পনেলে রূপ নেয়। এসব ধাতব টুকরো প্রচণ্ড গতিতে চারদিকে ছিটকে গিয়ে আশপাশের কয়েকশ মিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। খবর এনডিটিভির।
গবেষকরা বলছেন, এই ‘মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট’ অর্থাৎ বিস্ফোরণ এবং দ্রুতগতির ধাতব শার্পনেল-একসঙ্গে কাজ করায় এর মৃত্যুহার সাধারণ আইইডি বা বোমার তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফলে ভি-বাই-ইডি শুধু লক্ষ্যবস্তুকেই ধ্বংস করে না বরং আশপাশের মানুষ, ভবন, যানবাহন এবং অবকাঠামোর ওপর একসঙ্গে একাধিক স্তরে আঘাত হানে, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যও চরম চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে বা ব্যাপক জনসমাগম হয় এমন এলাকায় এসব হামলা ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন। এসব হামলায় ব্যবহৃত গাড়ি সাধারণত এমনই সাধারণ মডেলের হয় যা লাখো গাড়ির মাঝে আলাদা করে চেনা যায় না। নয়াদিল্লি হামলায় ব্যবহৃত আই২০ এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যবহৃত ফোর্ড ইকোস্পোর্টস-ডিজায়ার দুটিই খুব সাধারণ গাড়ি।
ভারত ভি-বাই-ইডির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত। ২০১৯ সালের কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলায় ভি-বাই-ইডি ব্যবহার করেই ৪০ জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০২২ সালে কোয়েম্বাটুরে আরেকটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত হন।
যেভাবে গাড়ি ঢুকে যায় লালকেল্লা এলাকায়: আত্মঘাতী হামলাকারী ডা. উমর মোহাম্মদ ফরিদাবাদ থেকে গাড়ি চালিয়ে বদরপুর সীমান্ত পেরিয়ে নয়াদিল্লিতে ঢোকে সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে। এর চালক ড. উমর কারটি দুপুর ৩টার দিকে লালকেল্লার পার্কিংয়ে ঢুকে ৩ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে। পুলিশের প্রশ্ন-এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও গাড়িটি কীভাবে শনাক্ত হলো না? উচ্চ-নিরাপত্তা এলাকায় গাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক লুকানো থাকলে সাধারণ মানের চেকিং বা তল্লাশিতে তা ধরা কঠিন। আর এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

