
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরভানি বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কাতার সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন ও সন্ত্রাসী হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের আলোকে কাতারের বৈধ আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি ইরান পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে।
ইরাভানি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলেন, “আমরা আবারও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র সেই মৌলিক ও অটল অবস্থানকে স্মরণ করছি, যা তার সনদের শিকড় থেকে উৎসারিত এবং শীর্ষ সম্মেলন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ধারাবাহিক প্রস্তাবের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। এ অবস্থান অনুযায়ী, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, ওআইসি'র এমন দৃঢ় অবস্থানের সর্বশেষ প্রতিফলন ঘটেছে ২২ জুন ২০২৫-এ ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে। সেই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সশস্ত্র হামলাকে কঠোরতম ভাষায় নিন্দা জানানো হয় এবং নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানানো হয় অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে— যাতে জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের আওতায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে বাধ্য করা যায়।
ইরাভানি আরও বলেন, “দখলদার ইসরাইলের হামলার ফলে কাতার ও ফিলিস্তিনের কয়েক জন নিরীহ নাগরিক হতাহত হয়েছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এ ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে এবং কাতার সরকারের প্রতি পূর্ণ সংহতি ও সমর্থন ব্যক্ত করছে।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, কাতার নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আইনি সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে— এবং ইরান সেই অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন দেয়।
ইরাভানি দখলদার ইসরায়েলের এই সামরিক আগ্রাসনকে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ধারাবাহিক আগ্রাসন, ইরানের ওপর হামলা এবং এখন কাতারের বিরুদ্ধে আক্রমণ— সবকিছুই প্রমাণ করে যে, দখলদার ইসরায়েল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বাস্তব ও সার্বক্ষণিক হুমকি।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, ১৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সহায়তা ও মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল কোনো উসকানি ছাড়াই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনব্যাপী সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। এ সময় তারা ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে নিশানা করে। তিনটি জরুরি বৈঠক সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়ে এবং কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা ইসরায়েলি দখলদারদেরকে আরও বেপরোয়া করেছে এবং তারা এখন গোটা অঞ্চলে নির্ভয়ে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইরানের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞকে স্বাভাবিক করে তুলেছে এবং ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, ইরান ও এখন কাতারের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধমূলক আগ্রাসনকে কার্যত মেনে নিয়েছে।”
তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে উপস্থিত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেন, “দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে অন্যান্য দেশকে হুমকি দিয়েছেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন— যেখানে হামাস নেতাদের উপস্থিতি পাওয়া যাবে, সেখানে ইসরায়েল হামলা চালাবে। আজ যদি নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে খুব শিগগিরই আরও দেশ ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার হবে।”
ইরাভানি আরও বলেন, “এই সংকটময় মুহূর্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার অর্থ হলো নিজের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এবং জাতিসংঘের মূল নীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা কেবল আগ্রাসীকে আরও সাহসী করে তুলবে, আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্বল করবে এবং সারা বিশ্বে অপরাধের দায়মুক্তির এক ভয়াবহ বার্তা ছড়িয়ে দেবে।”
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম